গত সপ্তাহের জন্য বলার মত একটি শব্দই আছে, আর তা হল ডলার। ডলারই গত সপ্তাহের সকল চাল-চিত্র বদলে দিয়েছে। এরকম শক্তিশালী ডলারের চিত্র গত কয়েক মাসে বিশ্ব আর দেখেনি। একদিকে অপ্রত্যাশিত অতিরিক্ত শক্তিশালী NFP, অপরদিকে গত সাড়ে ৭ বছরের সর্বনিম্ন বেকারত্বের হার। ফেড চেয়ার প্রধান এবং বর্তমানে বিশ্বের ৭ম প্রভাবশালী ব্যাক্তিত্ব জ্যানেট ইয়েলেন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ডিসেম্বরে ফেডের ইন্টারেস্ট রেট বা সুদের হার বাড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যদি সামনে অর্থনৈতিক ডাটাগুলো আমেরিকার অর্থনীতির জন্য শুভকর আসে। সাম্প্রতিক ডাটাগুলো থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন যে ডিসেম্বরে ফেডের সুদের হার বাড়ানোর সম্ভাবনা বুঝি আরও জোরদার হল। ফেডারেল রিসার্ভ যে সুদের হার বাড়াবে তা নিশ্চিত, তবে আসলেই তা ডিসেম্বরে বাড়বে নাকি আগামী বছরের মার্চে বাড়ানো হবে তা দেখার বিষয়। বর্তমানে ফেডের ইন্টারেস্ট রেট ০.২৫%. সুত্রমতে ২০১৬ সালের শেষের দিকে ফেড তা ১.২৫% এ নিয়ে যেতে পারে, তাই ডিসেম্বরে সুদের হার বেড়ে ০.৫০% এ যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গত সপ্তাহে US Dollar Index ২.৩১% বেড়ে ৯৯.২৯ এ দাড়িয়েছে। গত ১৪ এপ্রিলের পর এবার আবার ডলার ইন্ডেক্স এতোটা শক্তিশালী হল। সবগুলো পেয়ারের বিপরীতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে শক্তিশালী হয়েছে ডলার। এ সপ্তাহের ট্রেডিং কিছুটা কঠিন হতে পারে। একে তো ডলার অনেক শক্তিশালী, তাই ডলারের আরও শক্তিশালী হবার সুযোগ কিছুটা কম বলেই ভাবছেন অনেকে। ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গ্রোথ এবং ইনফ্লাশনের (মুদ্রাস্ফীতি) রিপোর্টের পর ব্রিটিশ পাউন্ডও দুর্বল হয়েছে কিছুটা। এই রিপোর্ট থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় ইউকের ইন্টারেস্ট রেট সম্ভবত আরও কিছু সময় অপরিবর্তিতই থাকবে। BOE প্রেসিডেন্ট মার্ক কার্নে তো বলেই দিয়েছেন চলমান অবস্থা তার মতে সঙ্গতিপূর্ণ রয়েছে।
এ সপ্তাহে ট্রেডাররা ডিসেম্বরে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখতে পারে এমন নিউজগুলোকে বেশ গুরুত্ব দেবে। শুক্রবারের US Retails Sales, Producer Price, Consumer Sentiment এই ডাটাগুলো বেশ প্রভাব রাখতে পারে। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন ডলারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিউজগুলো মূলত শুক্রবারেই রিলিজ হয়। মঙ্গলবারের চায়নার মুদ্রাস্ফীতির রিপোর্টও মার্কেটে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া শুক্রবারে ইউরোপের প্রধান দেশগুলোর অর্থনৈতিক বিকাশের Preliminary ডাটাগুলোও ট্রেডারকে গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন সপ্তাহকে সামনে রেখে বিডিপিপস সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ নিউজ ইভেন্টগুলোর তালিকা তৈরি করেছেঃ
সোমবারঃ
ট্রেডিং সপ্তাহের প্রথম দিনে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোন নিউজ নেই। ট্রেডাররা ব্রাসেলসে অনুস্থিতব্য Eurogroup Meeting এর প্রতি নজর রাখতে পারেন। ইউরোজোনের প্রেসিডেন্ট, ইউরোজোনের সদস্য দেশগুলোর অর্থমন্ত্রী, ইসিবি প্রেসিডেন্টসহ আরও অনেকে এই মিটিংয়ে উপস্থিত থাকেন। এই মিটিংয়ে ইউরোজোনের বিভিন্ন আর্থিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। যদিও এই মিটিং সংবাদ মাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত নয়, তবে মিটিং শেষে অফিসিয়াল স্টেটমেন্ট রিলিজ হতে পারে।
মঙ্গলবারঃ
মঙ্গলবারও তেমন কোন তাৎপর্যপূর্ণ নিউজ নেই।
ভোর ৫:৫০ এ জাপানের Current Account ডাটা প্রকাশিত হবে। সেপ্টেম্বর মাসের ইমপোর্টেড এবং এক্সপোর্টেড পন্যের মুল্যের পার্থক্য এই ডাটার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
সকাল ৬:৩০ এ অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ব্যাংক Business Confidence ডাটা প্রকাশ করবে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাবসার বর্তমান অবস্থা বোঝা যায় এই ইনডেক্সের মাধ্যমে। গতবার এর ভ্যালু এসেছিল ৫ এবং এবার এর থেকে বেশি আসলে তা অস্ট্রেলিয়ান ডলারের জন্য ভালো। এই ফিগার ০ এর বেশি আসলে নির্দেশ করে যে অবস্থার উন্নতি হয়েছে, এবং ০ এর নিচে অবনতি বোঝায়।
সকাল ৭:৩০ এ চায়নার কনজিউমার প্রাইস ইন্ডেক্স CPI y/y ডাটা রিলিজ হবে। এবার ১.৫% আশা করা হচ্ছে।
বুধবারঃ
দুপুর ৩:৩০ এ প্রকাশিত হবে UK Unemployment Rate রিপোর্ট। ইউকের শ্রমবাজার পূর্বের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ২০০৮ সালের পর এবার আবার বেকারত্বের হার এত নিচে রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের বেকারত্বের হার এসেছিল ৫.৪% এবং অক্টোবরের হারও ৫.৪% এ থাকবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
বিকেল ৪:৩০ এ ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নে বক্তব্য রাখবেন। গত সপ্তাহে প্রকাশিত ইনফ্লাশন রিপোর্টের ব্যাপারেই তিনি কথা বলবেন। স্টেটমেন্টের তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন আগামী ২ বছর সুদের হার নাও বাড়তে পারে। তিনি বলেছিলেন ২০১৭ এর মাঝামাঝি পর্যন্ত সুদের হার পরিবর্তন না হলে মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার ২% এ যেতে পারে।
সন্ধ্যা ৩টায় ECB (ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক) প্রধান মারিও দ্রাঘি লন্ডনে বক্তব্য রাখবেন। তিনি সুদের হার কমানো এবং Quantitative Easingসম্পর্কে কথা বলতে পারেন।
বৃহস্পতিবারঃ
সকাল ৬:৩০ এ প্রকাশিত হবে Australian Employment Data রিপোর্ট। মূলত ২ ধরনের ডাটা এই রিপোর্টে প্রকাশিত হয়। Employment Change এর মাধ্যমে বোঝা যায় গত মাসে কি পরিমাণ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। সেপ্টেম্বরে উল্টো ৫১০০ কর্মসংস্থান কমেছিল, তবে এবার ১৫২০০ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। Unemployment Rate এর মাধ্যমে বোঝা যায় গত মাসে কি পরিমাণ মানুষ বেকার ছিল এবং চাকরীর সন্ধানে ছিল। সেপ্টেম্বরে ৬.৩% থেকে কমে এই সংখ্যা ৬.২% এ দাঁড়ায়। অক্টোবরেও বেকারত্বের হার ৬.২% এই অপরিবর্তিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সন্ধ্যা ৭:৩০ এ প্রকাশিত হবে US Unemployment Claims রিপোর্ট। গত সপ্তাহে কি পরিমাণ জনগণ বেকার ভাতার সুবিধা নিয়েছে তা প্রকাশিত হয় এই ডাটার মাধ্যমে। গত সপ্তাহে এই রিপোর্টটি ডলারের জন্য দুর্বল এসেছিল। ২৬৩,০০০ আশা করা হলেও গত সপ্তাহে তা ২৭৬,০০০ এসেছিল, যা এবার আবার ২৬৩,০০০ তে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সমগ্র অবস্থা বিবেচনা করলে আমেরিকার শ্রমবাজার যথেষ্ট ভালো অবস্থানে রয়েছে।
শুক্রবারঃ
দুপুর ১ টায় প্রকাশিত হবে German Prelim GDP q/q রিপোর্ট। দ্বিতীয় প্রান্তিকে জার্মানির অর্থনীতি ০.৪% সম্প্রসারিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা আশা করছেন তৃতীয় প্রান্তিকে জিডিপি ০.৩% বাড়তে পারে।
সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় প্রকাশিত হবে US Retail sales ডাটা দুটি। সেপ্টেম্বরে রিটেইল সেলস ডাটা দুর্বল এসেছিল। অক্টোবরে Retail Sales ০.৩% এবং Core Sales ০.৪% বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সন্ধ্যা ৭:৩০ টায় আরও প্রকাশিত হবে US PPI m/m ডাটা। সেপ্টেম্বরে প্রডিউসর প্রাইস ইনডেক্স ৮ মাসের সর্বনিম্ন নেমেছিল। আগস্ট মাসে অপরিবর্তিত হবার পর তা সেপ্টেম্বরে ০.৫% কমে যায়। অক্টোবরের রিপোর্টে তা ০.১% বাড়তে পারে।
রাত ৯ টায় প্রকাশিত হবে UoM Consumer Sentiment এর প্রাথমিক বা preliminary রিপোর্ট। গত মাসে কনজিউমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স আশার তুলনায় বেশিই এসেছিল। এই বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট আশাব্যাঞ্জক। এবার নভেম্বরে এই ইনডেক্স ৯১.২ আসতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে নিউজগুলো মার্কেটে খুব ভালো প্রভাব ফেলেছিল। ডলার যেখানে অনেক শক্তিশালী এবং ইউরো অপেক্ষাকৃত দুর্বল, এ অবস্থায় এ সপ্তাহে নিউজগুলো মার্কেটে কেমন প্রভাব ফেলে এবার তাই দেখার বিষয়। আপনার ট্রেডিং অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন