ডিসেম্বর মাসকে ফরেক্স ট্রেডাররা কুফা বলেই জানেন। সারা বছর লাভ করা হলেও, এই ডিসেম্বর মাসেই প্রফিট করা কেন যেন কঠিন হয়ে যায়. ক্রিসমাসকে ঘিরে ও বছর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনোয়োগ কমিয়ে আনায় মার্কেটে তারল্য কম থাকায় হঠাৎ হঠাৎ মার্কেট স্পাইক করা একটি প্রধান কারন।
তবে, ইসিবি ও ফেডের কল্যাণে সে ধারা বোধহয় ঘুচল এবার। ১৬ই ডিসেম্বর ফেডের সুদের হার বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা তো ইতিমধ্যেই জানেন। কিন্তু তার আগেই ৩ ডিসেম্বর সম্ভাব্য চমক দিতে যাচ্ছেন ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসিবির প্রধান মারিও দ্রাঘিও। তবে তার এই চমক স্বয়ং ইউরোপের মানুষেরাও কতটা পছন্দ করেন, দেখার বিষয় এখন সেটাই। তবে আর যাই হোক, EUR/USD আরও দুর্বল হওয়ার জন্য যা যা দরকার, সবই হচ্ছে ডিসেম্বর মাসে।
মারিও দ্রাঘির সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্রমাগত কমতে কমতে ঋণাত্মক হয়ে যাওয়া ইউরোপের মুদ্রাস্ফীতিকে ধনাত্বক করা। যেখানে আমাদের দেশে দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, উল্টো ঘটনা ঘটছে ইউরোপে। অর্থাৎ দাম কমছে জিনিসপত্র ও সেবার। আপাতদৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও এতে আয় কমে যাচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলশ্রুতিতে লোকসংখ্যা কমাতে হচ্ছে তাদের ও বেকারত্ব বাড়বে।
কিন্তু, মুদ্রাস্ফীতি কম কেন? এর সহজ উত্তর বিনোয়োগ কম। অপরদিকে ব্যাংকে অলস ডিপোজিটের পরিমান বাড়ছে। বাজারে মুদ্রার সরবরাহ বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর জন্য আরো ইউরো ছাপানো যায়, কিন্তু এর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে ইউরোপপ্রধান জার্মানি।
খবরে প্রকাশ, ২০ টিরও বেশি সম্ভাব্য উপায় পর্যালোচনা করছেন মারিও দ্রাঘি। কিন্তু, এগুলোর যেকোন একটাও যে কার্যকর হবে, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। উল্টো ইউরোপের ১৯ টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রধানকেই খুশি রাখতে হবে তাকে। এমতাবস্থায়, ইসিবি পরিকল্পনা করছে, ইসিবির সাথে যেসব ব্যাংক তাদের অলস ডিপোজিট জমা রাখে তাদের অলস ডিপোজিটের পরিমান কমাতে, যাতে এই টাকা বাজারে চলে আসে।। ইতিমধ্যেই অলস টাকার পরিমান কমানোর জন্য ঋণাত্বক সুদের হার প্রবর্তন করা হয়েছে। তবে, বার্ষিক ০.২০ শতাংশ ঋণাত্বক সুদও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধিতে কার্যকর ব্যবস্থা রাখতে পারছে না। এমতাবস্তায় ইসিবি চাচ্ছে দুই স্তরে এসব ব্যাংকের উপর ফি আরোপ করতে, যার ভার বহন করতে হবে ব্যাংকের গ্রাহকদেরও। এতে ঋণাত্বক সুদের হার আরো বাড়ানো সহজ হবে এবং ব্যাংকগুলোর উপর চাপও কমে আসবে।
তবে, প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাংকে টাকা রাখলে যদি সুদ পাওয়ার পরিবর্তে সুদ দিতে হয়, তাহলে মানুষ কেন ব্যাংকে টাকা রাখবে? ঠিক এটাই চাচ্ছে ইসিবি। তারা চাচ্ছে এই অর্থ ব্যাংকে অলস ফেলে রাখার পরিবর্তে মানুষ যেন তা বিনিয়োগ করে। তবে, অন্য পন্থায় যে মানুষ ইউরো জমা করে রাখবে না, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। উল্টো এর ফলে ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর চাপ বাড়তে পারে এবং একসাথে অনেকে তাদের অর্থ ব্যাংক থেকে তুলে নিলে রানআউট বা অর্থ স্বল্পতায় পড়তে পারে ব্যাংকগুলো।
ইউরো দুর্বল হতে পারে
ইসিবির ৩ নভেম্বরের বৈঠককে ঘিরে তাই উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কেননা এই বৈঠক থেকেই ইসিবির নতুন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানা যাবে। আসলেই যদি ইসিবি দুই স্তরের ফি চালু করে ব্যাংকগুলোর জন্য ও ঋণাত্বক সুদের হার বৃদ্ধি করে, তাহলে বড় ধরনের দরপতনের সম্মুখীন হবে ইউরো এবং ইউরোর সবগুলোর কারেন্সি পেয়ার, বিশেষ করে EUR/CHF ও EUR/USD দুর্বল হবে।
এমতাবস্থায়, দীর্ঘমেয়াদে এই মুহূর্তে EUR/USD বাই করা ঝুকিপুর্নই বটে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন