বছরে আটবার , সাধারনত সবসময়ই বুধবার, গুণে গুণে ঠিক বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেড (FED) তার গুরুত্বপূর্ণ পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসার পর একটি বিবৃতি দেয়। সেই বিবৃতির প্যাটার্ন কি, তাও আবার আগে থেকেই ঠিক করা। এই বৈঠকই Federal Open Market Committee Meeting বা সংক্ষেপে FOMC মীটিং নামে পরিচিত।
ফেড হয় এক বিশেষ ধরনের সুদের হার বাড়াবে , কমাবে অথবা আগের মতই রাখবে। এই বিশেষ ধরনের সুদের হারের নাম হচ্ছে Overnight Borrowing Rate. মানে, একদিনের জন্য কোন ব্যাংক অপর ব্যাংকের কাছ থেকে তার জন্য যে সুদ দিতে হবে। কিন্তু, এই এতটুকু সিদ্ধান্তই যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবনে কি ব্যাপক প্রভাব রাখতে পারে, তা বলাই বাহুল্য়। কিভাবে, তা জানতে চান?
কারণ এই একদিনের জন্য টাকা ধার করাটাই অর্থনীতির অন্যতম ঝুকিপূর্ণ কাজ। আর সেই ধার করার পেছনে খরচ যত বাড়বে, তার উপর ভিত্তি করে মানুষ যা যা করতে চায়, সেগুলোর খরচও বাড়বে। আর তাই, ব্যাঙ্ক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তিবিশেষ কেউই বেশি একটা এই ঝুকিতে যেতে চাইবে না। ফলশ্রুতিতে কি হবে? তারা ধারও কম করবে, বিনিয়োগ ও কম করবে। তার মানে, সামগ্রিকভাবে কমে যাবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড।
তো ফেড তাহলে সুদের হার বাড়ায় কেন? সবসময় কমিয়ে রাখতে পারে না? আসলে অর্থনীতি বেশি চাঙ্গা থাকলে প্রবলেম (মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে), আবার বেশি স্থবির হলেও প্রবলেম (ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে). তাই, সুদের হার বাড়িয়ে কমিয়ে সবসময় একটা ভারসাম্য তৈরি করার চেস্টা করা হয়.
এখন দেখুন, একজন সাধারণ কৃষকের কাছেও ফেডের এই Overnight Borrowing Rate কতটা গুরুত্বপূর্ণ:
থমাস মুলার যুক্তরাষ্ট্রের একজন কৃষক। পৈত্রিক সূত্রে বেশ ভালো পরিমাণ জমিরই মালিক তিনি। এই জমিতে তিনি চাইলে সয়াবিনও চাষ করতে পারেন আবার অন্যান্য শস্য়ও চাষ করতে পারেন। সয়াবিনে লাভ অনেক বেশি, কিনতু এর জন্য তাকে আন্তর্জাতিক বাজারের দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়. কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন রপ্তানীতে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দী। বাপ দাদার মত তাই তাকেও ফেডের Overnight Borrowing Rate এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়, কারন তার যে ব্যবসা তার জন্য ব্যাঙ্ক লোনের প্রয়োজন। আর সুদের হার বেড়ে গেলে তার উত্পাদন খরচ ও বেড়ে যাবে। মড়ার উপর খরার ঘা হচ্ছে সুদের হার বেড়ে গেলে বেশি সুদের আশায় মানুষ ডলারও ব্যাংকে বেশি রাখে, আবার অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারীয় বেশি ডলার কিনতে চায়. ফলে, বাজারের সরবরাহ যায় কমে, আর ডলারের দামও যায় বেড়ে। ফলে, অন্য় দেশের আমদানীকারকদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কিনতে গেলে অনেক বেশি খরচ পড়বে,আর তাই তারা চিন্তা করবে সস্তায় ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা থেকে কিনতে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন উত্পাদকেরা মার খেয়ে যাবে।
তাই, সবারই জানার আগ্রহ থাকে, সামনের দিনগুলোতে Overnight Borrowing Rate কিরকম থাকবে। আর তা জানার একমাত্র উপায় ওই FOMC মিটিংই। কিনতু , তার অপেক্ষায় কি আর সবসময় বসে থাকলে চলে? সাংবাদিকরা তাই সবসময় ফেডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পেছনে লেগে থাকেন। তাদের কথাবার্তা থেকেই তো ইঙ্গিত পাওয়া যায়, কি হতে যাচ্ছে পরবর্তী FOMC মিটিংএ। ফেড সুদের হার বছরে ওই একদুইবারই বাড়ায় বা কমায়। কিনতু, সেটা কখন, তা জানাই থমাস বা অন্যদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেভাবেই তারা ব্যবসার পরিকল্পনা সাজান, সয়াবিন চাষ করবেন নাকি আলু, টমেটো যা কম লাভ হলেও ডলারের দামের উপর নির্ভরশীল না, স্থানীয় বাজারেই বিক্রি করা যায়। তাই, বছরে ফেডের আটটি মিটিং এর প্রতিই খুব আগ্রহ থাকে সবার।
এবার, আপনিই বলুন, টমাসের কাছে যদি FOMC মিটিং এত গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আমরা যারা ডলার পাউন্ড নিয়েই ফরেক্স মার্কেটে ব্যবসা করি, তাদের জন্য FOMC মিটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বুঝতেই পারছেন, সুদের হার বাড়ল নাকি কমল, শুধু সেটার উপর ভিত্তি করেই FOMC মিটিং এর পর ডলার শক্তিশালী অথবা দুর্বল হয় না। FED সুদের হার অপরিবর্তিত রাখলেও তা ডলারকে শক্তিশালী অথবা দুর্বল করতে পারে, যদিনা শুধু এমন জোরালো কোন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কখন সুদের হার বাড়তে বা কমতে যাচ্ছে। সেটা FOMC মিটিং থেকেই জানা যাক, অথবা তার আগে পরে কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে জানা যাক।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন